
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও পৃথকীকরণঃ একটি পর্যালোচনা
ভূমিকা
আজ থেকে ৫০ বছর আগে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।আমাদের অঙ্গিকার ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারপ্রতিষ্ঠা করব। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠত হবে। জনগণই হবে রাষ্ট্রের মূলমালিক। আইন, শাসন ও বিচার বিভাগ পরস্পর বোঝা পড়ার মাধ্যমে জনগণেরঅধিকার নিশ্চিত করবে। এগুলোই ছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অনিবার্যঅনুসঙ্গ।এই সংক্ষিপ্ত পথ পরিক্রমায় আমরা অঙ্গিকার রক্ষা করতে পারিনি। জনগণেরশাসনের পাশাপাশি সামরিক শাসন ও স্বৈরশাসন আমাদের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ আজ স্বপ্ন মাত্র। মানুষের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন হলেও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা দৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় নি। গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র ‘নিয়ন্ত্রিত সরকার’ ব্যবস্থা আমরা আত্মস্থ করতে পারিনি। কে কার চেয়ে বড়? কার প্রতিপত্তি কত বেশি? কে বা কারা এই রাষ্ট্রের মূল দাবিদার? এই বিতর্ক আমাদেরকে অক্টোপাসের মত আবদ্ধ করে রেখেছে। গঠনমূলক কর্মকান্ডকে আমরা গভীর মনোনিবেশ করতে পারিনি। ফলে আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার ওজবাবদিহিতামূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আমরা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছি। সামাজিক জীব হিসেবে আমরা বিচার আচারের বাইরে নই। পরস্পর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আমরা সকলেই জড়িত। এই স্বার্থের দ্ব›দ্ব সঠিকভাবে নিষ্পত্তি করার জন্য প্রয়োজন স্বাধীন বিচার বিভাগ। প্রয়োজন জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও শ্রেণী নির্বিশেষে সকলের জন্য বিচার পাওয়ার পথ সুগম করা। দল, মত বা পথের মুখাপেক্ষী না হয়ে ন্যায় বিচারের নজির উপস্থাপন করা। সংবিধান প্রণেতাগণ সকল দিক বিবেচনা করে স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এই লেখায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ধারণা, ইসলামে ন্যায় বিচারের উদাহরণ, ভারতবর্ষে বিচার বিভাগের পথ পরিক্রমা, উচ্চ আদালতের দৃষ্টিভঙ্গি ও বিচারিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে সর্বশেষ বিধি বিধান আলোচনা করা হয়েছে। পরিশেষে, ইতোমধ্যে গৃহীত পদক্ষেপসমূহের সুফল এবং ভবিষ্যতে করণীয় সম্পর্কে কিছু সুপারিশমালা তুলে ধরা হয়েছে। এই পর্যালোচনা প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। ন্যায় বিচার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ভবিষ্যতে তাদের এই পরিশ্রম অব্যাহত থাকবে এই প্রত্যাশা করছি। আমি আশাকরি, এই ক্ষুদ্র প্রয়াস ন্যায় বিচার নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও অনুরণন সৃষ্টি করবে।